এর আগে পরিচালক ইন্দ্রাশিস আচার্য দেখিয়েছেন ‘বিলু রাক্ষস’, ‘পিউপা’ ও ‘পার্সেল’-এর মতো ছবি।তাঁর তৃতীয় ছবি ‘পার্সেল’-এর জন্য এবারের কলকাতা আন্তর্জাতিক ফিল্মোৎসবে সেরা পরিচালকের স্বীকৃতিও পেয়েছেন তিনি। তাঁর ছবি ‘পিউপা’-ও অর্ন্তজাতিক মহল থেকে শিরোপা কুড়িয়ে এনেছে। সমালোচক এবং দর্শক মহলে তা উচ্চপ্রশংসিত হয়। তার মধ্যেই নতুন কাজে কোমর বেঁধে নামলেন পরিচালক ইন্দ্রাশিস আচার্য। এবার তাঁর চতুর্থ ছবি হতে চলেছে ‘মায়াভয়’। সঞ্জীব চট্টোপাধ্যায়ের ‘ভয়’ গল্প থেকে অনুপ্রাণিত হয়েছে তাঁর পরবর্তী ছবি ‘মায়াভয়’-র গল্প। ভালোবাসা তিক্ততায় ভরা অন্যরকম সাইকোলজির গল্প বলবে এই সিনেমা। ইন্দ্রাশিসের আগের সিনেমাতেও দেখা গিয়েছে সম্পর্ক এবং মনস্তত্ব অন্যরকম ছবি। এখানেও তাই। ছবি সম্পর্কে ইন্দ্রাশিস বলেন, “এখন আমাদের সমাজ অনেকটাই মুক্তমনা হয়েছে । সেখান থেকে সব ধরনের সম্পর্ককে মেনে নিচ্ছি আমরা । আমরা ভয় পেয়ে এমন অনেক সম্পর্ককেই ত্যাগ করি । তাতে দেখা যায় শেষপর্যন্ত কারও ভালো হল না । ভালোবাসা বা প্রেম এতটাই আনবাউন্ডেড হওয়া উচিত, যে সেখানে কোনও বাঁধন রাখা উচিত নয় । বাঁধন রাখলেই সমস্যা । এই ভালোবাসাটা কিন্তু সরিয়ে নেওয়া যায় না । কিন্তু এটা দু’জনকেই চেষ্টা করে সরিয়ে নিতে হয় । এটা যেমন একদিকে সত্যি, এটাও সত্যি যে আমাদের মধ্যে উচ্চাকাঙ্খা এমনভাবে দানা বেঁধেছে, যে কেউই আমরা থিতু হয়ে বসতে পারছি না । সেখানে প্রেম উবে গেছে এবং সমস্ত ভালোবাসা পিছন দিকে চলে গেছে । আমরা শুধুই শিখরে উঠতে চাইছি । শেষে যেটা হচ্ছে, আমাদের ভালোবাসা ছাড়া একটা জীবন কোথায় আমাদের পৌঁছে দেয়, সেটাই বলা হয়েছে এই গল্পে ।” এই প্রথমবার প্রধান চরিত্রে পাওয়া যাবে ‘সোয়েটার’, ‘পঞ্চলাইট’ খ্যাত অভিনেত্রী অনুরাধা মুখোপাধ্যায়কে। ইন্দ্রাশিস বললেন, ‘‘অনুরাধার ছবি আমি আগে না দেখলেও ওর বেশ কিছু কাজের ক্লিপিংস দেখেছি। খুব ইন্টারেস্টিং লুক ওর এবং আমার ছবির কেন্দ্রীয় চরিত্রের জন্য যে বয়সটা দরকার ছিল, তার সঙ্গে একেবারে মানানসই অনুরাধা। বেশ ভাল অভিনেত্রীও বটে। এসব কারণেই প্রধান চরিত্র ‘দীপা’র জন্য অনুরাধাকে নেওয়া।’’ ‘মায়াভয়’-এর মুখ্য চরিত্র দীপার কৈশোর কাটে এক পৈশাচিক পরিবেশে। ওই পরিবেশেই মাকে হারায় সে । মায়ের মৃত্যুর পর সে আশ্রয় নেয় মামাবাড়িতে। মামা-মামির সঙ্গে তার জীবনের পরবর্তী অধ্যায় শুরু হয়। সে জীবন বরং আলোয় ভরা। এই সময় কমবয়সে ভালবাসা না পাওয়া দীপা এমন অনেক অভিজ্ঞতার সম্মুখীন হয়, যা তার মনে হয় অনুচিত। সেখান থেকে এবং নিজের অস্তিত্ব সংকট থেকে বেরিয়ে আসার জন্য আপ্রাণ চেষ্টা করে সে। মূলত মনস্তত্ব নির্ভর সিনেমা হতে চলেছে ‘মায়াভয়’। দীপার মামার ভূমিকায় থাকছেন টোটা রায়চৌধুরি। মামির চরিত্রে পাওয়া যাবে অপরাজিতা ঘোষ দাসকে। আর দীপার বন্ধু রঙ্গনের ভূমিকায় থাকছেন রাহুল। প্রসঙ্গত, রাহুল এর আগে ‘পিউপা’তেও ইন্দ্রাশিসের সঙ্গে কাজ করেছিলেন। ফেব্রুয়ারি মাস থেকে ছবির শুটিং শুরু। দার্জিলিংয়ের কাছে এক গ্রামে অনেকটা শুটিং হবে। ক্যামেরার দায়িত্বে শান্তনু দে, আর ছবির মিউজিক করছেন জয় সরকার। সাউন্ডের তত্ত্বাবধানে সুকান্ত মজুমদার। সম্পাদনায় সৌভিক দাশগুপ্ত। এমন একটি গল্পকে সিনেমার চিত্রনাট্য হিসেবে কেন বেছে নিলেন ইন্দ্রাশিস। এই প্রসঙ্গে পরিচালক বলেন, ‘এই গল্পটা বেছে নেওয়ার একটা কারণ আছে। আমরা যতই বলি উদার সমাজ আমাদের। কিন্তু আসলে সম্পর্কগুলো খুব ডিফাইন্ড, তার বাইরে হয়ে গেলেই মেনে নিতে পারি না আমরা, মুখে যতই বলি। সেই জায়গাটা ধরবে ছবিটা। আর দীপা আমাদের রাজ্য, দেশের মেয়েদের রিপ্রেজেন্ট করবেও বলা চলে। যার সঙ্গে অনেকে রিলেট করতে পারবে।’