আজ থেকে ৩০ বছর আগে প্রায় ৪ লক্ষ কাশ্মীরি পণ্ডিতকে ভিটে-মাটি ছাড়া হতে হয়েছিল। নিজেদের ঘর-বাড়ি ছেড়ে নিজেদের দেশেই শরণার্থী হয়ে যায় তাঁরা। এবার সেই কাশ্মীরি পণ্ডিতদের ঘরছাড়া হওয়ার গল্প বলতে চলেছেন বিধু বিনোদ চোপড়া। অনেক দিন পরে পরিচালকের আসনে ফিরেছেন তিনি। এর আগে তিনি স্বাধীনতার পটভূমিকায় প্রেমের আখ্যান বুনেছেন। কাশ্মীরি যুবকের সন্ত্রাসবাদী হওয়ার নেপথ্য কাহিনি শুনিয়েছেন। তাঁর আগামী ছবি ‘শিকারা’ মুক্তি পাবে ৭ ফেব্রুয়ারিতে। যার ট্যাগ লাইন ‘দ্য আনটোল্ড স্টোরি অব কাশ্মীরি পণ্ডিতস’। টিজারে ছবির গল্পের কিছুটা আঁচ পাওয়া গিয়েছিল। এবার মুক্তি পেল ছবির ট্রেলার। যা উসকে দিয়েছে ৩০ বছর আগে কাশ্মীরে ঘটে যাওয়া কিছু ঘটনার স্মৃতি। পরিচালক ‘শিকারা’ ছবিতে ১৯৯০ সালে কাশ্মীরি পণ্ডিতদের ঘর ছাড়ার সময়ের পটভূমিতে প্রেমের গল্প বলছেন। ট্রেলারে দেখা যাচ্ছে, এক দম্পতি যখন নিজেদের ঘরে বসে একান্তে সময় কাটাচ্ছেন, তখন আচমকাই প্রতিবেশীর বাড়ি জ্বলতে দেখে চমকে যান তাঁরা৷ বাইরে কী হচ্ছে দেখতে গিয়ে, আক্রান্ত হতে হয় তাঁদেরও৷ জ্বালিয়ে দেওয়া হয় তাঁদের ঘরবাড়িও৷ ওই দম্পতির বাড়িতে আগুন জ্বালিয়ে দিলে, সেখানে থেকে বেরিয়ে যান তাঁরা৷ এই ঘটনার ফলে কাশ্মীরের ভিটেবাড়ি ছাড়তে বাধ্য হয়েছিলেন হাজারো পণ্ডিত-পরিবার। এরপর কাশ্মীরে কার্ফু, সেনা বাহিনীর টহলদারি এবং নির্বাচন সবকিছু শেষ হয়ে যায় কিন্তু তাঁরা বাড়ির বাইরেই রয়ে যান৷ শত চেষ্টা করেও নিজের বাড়িতে ফিরতে পারেননি তাঁরা৷ শেষ পর্যন্ত কি নিজের বাড়িতে ফিরতে পারবেন শিব ও শান্তি নামের ওই দম্পতি! রাজনীতি, সমালোচনার মধ্যেও ভালোবাসার বন্ধনকেই আঁকড়ে ধরেছে এই মুভিটি। আর এই ভালোবাসাই সিনেমার আশা-ভরসা। কীভাবে পণ্ডিতদের সঙ্গে ব্যবহার করা হত, কাশ্মীর ছেড়ে চলে আসার পথে তাঁদের সঙ্গে কেমন আচরণ করা হয়েছিল। উদ্বাস্তু শিবিরে কেমন জীবন অতিবাহিত হয়েছিল, সব কিছুই ফুটে উঠেছে সিনেমায়। প্রকাশ্যে আনা হয়েছে ৩০ বছর আগের নানা অজানা ঘটনা ও কাহিনি। যার একঝলক দেখা গিয়েছে সদ্য মুক্তি পাওয়া ট্রেলারে। বিধু বিনোদের এই ছবি আজকের অস্থির ভারতের প্রেক্ষিতে যথেষ্ট প্রাসঙ্গিক। ট্রেলার লঞ্চ অনুষ্ঠানে এসে পরিচালক বলেন, ”আমি যে কোনও ধরনের হিংসার বিরুদ্ধে। এটা কোনও কথার কথা নয়। আজ থেকে ৩০ বছর আগে যে হিংসাত্মক ঘটনা ঘটেছিল এবং আজ যা ঘটছে, সবটার বিরোধিতা করছি। তবে কোনও না কোনও দিন এর অবসান হবে, এই আশা রাখি। হয়তো আমি আদতে একজন কাশ্মীরি এবং কবিতাপ্রেমী মানুষ বলেই এই পরিস্থিতেও আশা রাখতে পারছি।” কাশ্মীরে ৩৭০ ধারা রদের ঘটনায় বলিউডের অনেকেই নীরব ছিলেন। সেই প্রসঙ্গে বিধুর জবাব, ”আমি বলিউডের, কিন্তু কাশ্মীরিও বটে। আমি কোথাও যাই না, পুরস্কার অনুষ্ঠানেও নেই। নিজের বাড়িতে আমি খুশি, বাকিরা তাঁদের বাড়িতে। যা বলার, ছবির মধ্য দিয়ে বলেছি।” ছবির প্রধান চরিত্র পন্ডিত দম্পতি শিব ও শান্তির ভূমিকায় দু’টি নতুন মুখ, আদিল খান এবং সাদিয়া-কে দেখা যাবে। সঙ্গীত এ আর রহমানের।