নবান্ন সভাঘর থেকে বিকেল ৪টের সময় ২৬তম আন্তর্জাতিক চলচ্চিত্র উৎসবের উদ্বোধন করলেন মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়। প্রতিশ্রুতি মতোই অনুষ্ঠানে ভার্চুয়ালি উপস্থিত ছিলেন শাহরুখ খান। তাঁকে বাংলাতে স্বাগত জানিয়ে মুখ্যমন্ত্রীর প্রশ্ন ছিল, ”কেমন আছো শাহরুখ, ভালো আছো তো?” দিদির প্রশ্নের উত্তরটাও বাংলাতেই দেন শাহরুখ। কোভিড আবহে চলচ্চিত্র উৎসবে সশরীরে উপস্থিত না থাকতে পারার জন্য আফসোস শোনা যায় কিং খানের গলাতে।তিনি বলেন, “কলকাতাকে আমি খুব মিস করছি। ২০১১ সাল থেকে প্রতিবছর উদ্বোধনী অনুষ্ঠানে থাকি। কিন্তু, এবার থাকতে পারলাম না। তবে শীঘ্রই কলকাতায় যাব।” তবে প্রিয় ভাই শাহরুখকে রাখিতে আসার কথা মনে করিয়ে দেন মুখ্য়মন্ত্রী। আসার প্রতিশ্রুতি দেন শাহরুখও। এদিন উদ্বোধনী অনুষ্ঠানে উপস্থিত ছিলেন বলিউড পরিচালক অনুভব সিনহা, গৌতম ঘোষ, রাজ চক্রবর্তী, কৌশিক গঙ্গোপাধ্যায়, রঞ্জিত মল্লিক, সাংসদ-অভিনেতা দেব ও রুক্মিণী মৈত্র, ঋতুপর্ণা সেনগুপ্ত, ইন্দ্রাণী হালদার, কৌশিক সেন, অরিন্দম গঙ্গোপাধ্যায়, সোহম চক্রবর্তী, শঙ্কর চক্রবর্তী প্রমুখ। সঞ্চালনার দায়িত্বে ছিলেন পরমব্রত চট্টোপাধ্যায় ও জুন মালিয়া। এছাড়া, দীপ প্রজ্বলনের সময় মুখ্যমন্ত্রীর পাশে দেখা গেল শ্রাবন্তী চট্টোপাধ্যায়, পায়েল সরকার, বিরসা দাশগুপ্ত, ইন্দ্রদীপ দাশগুপ্ত, মধুমিতা সরকার, সৌরসেনী মৈত্র, ঋতাভরী, সায়নী, পাওলি দাম, কাঞ্চন মল্লিক, বনি সেনগুপ্ত, কৌশানী, অনন্যা চট্টোপাধ্যায়, শান্তিলাল মুখোপাধ্যায়, হরনাথ চক্রবর্তীকে। অনুষ্ঠানের শুরুতেই প্রয়াত অভিনেতা সৌমিত্র চট্টোপাধ্যায়-এর কিছু সিনেমার ভিডিও কোলাজ করে তাঁকে শ্রদ্ধা জানানো হয়। যা দেখে চোখে জল এসে যায় উপস্থিত অতিথিদের। উৎসবে সৌমিত্র-অভিনীত মোট ৯টি ছবি দেখানো হবে এবার। সত্যজিৎ স্মারক বক্তৃতায় উপস্থিত অনুভব সিনহা। বিষয়, সোশ্যাল রেসপন্সিবিলিটি ইন মেইনস্ট্রিম ইন্ডিয়ান সিনেমা। করোনার কারণে এবার চলচ্চিত্র উৎসবের হলের সংখ্যাও কমানো হয়েছে। জানা যাচ্ছে, শিশিরমঞ্চ, নন্দন, রবীন্দ্রসদন সহ মাত্র ৬টি প্রেক্ষাগৃহে দেখানো হবে চলচ্চিত্র উৎসবের সিনেমাগুলি। আগে বলা হয়েছিল ৫০ শতাংশ দর্শক নিয়েই দেখানো হবে ছবিগুলি। তবে আজ উৎসবের উদ্বোধনে মুখ্যমন্ত্রী জানিয়ে দিলেন ৫০ শতাংশ নয়, ১০০ শতাংশ দর্শক নিয়ে সিনেমা দেখানো হবে, তবে সুরক্ষা হিসাবে বারবার স্যানিটাইজ করা হবে আসন গুলি। তবে সিনেমা দেখতে আসতে হবে মাস্ক পরেই মনে করিয়ে দেন মমতা বন্দ্য়োপাধ্য়ায়। আর এরপরেই উপস্থিত তারকাদের মুখ্যমন্ত্রীর আদুরে ধমক মাস্ক পরোনি কেন? সকলের হয়ে উত্তরে রাজ বলেন, ”না, ওরা একটু স্টাইল করছে।” তবে মুখ্যমন্ত্রীর পরামর্শ মেনে সকলেই সঙ্গে সঙ্গে মাস্ক পরে নেন। উদ্বোধনী অনুষ্ঠানে বক্তৃতা দিতে গিয়ে মুখ্যমন্ত্রীর কড়া নির্দেশ, মাস্ক এবং হ্যান্ড স্যানিটাইজার বাধ্যতামূলক। প্রত্যেকটা সিনেমাহলেই। এছাড়াও ব্যক্তিগতভাবে স্যানিটাইজার সাথে রাখার অনুরোধ করেন মাননীয়া মুখ্যমন্ত্রী। একটা শো শেষ হলেই গোটা সিনেমাহল স্প্রে করে স্যানিটাইজ করার নির্দেশ মুখ্যমন্ত্রীর। উদ্বোধনী অনুষ্ঠানে উপস্থিত ব্যক্তিত্বদের উদ্দেশে মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের নির্দেশ, “যখন সিনেমা দেখতে যাবেন বা সিনেমা নিয়ে আলোচনা হবে, তখন সবাই মাস্ক পরুন। কোনও অসুবিধে হবে না। মাস্ক হালকা। নির্দিধায় কথাও বলা যাবে। কোনও সমস্যা হবে না। কারণ আমরা চাই না অযথা কেউ অসুস্থ হয়ে পড়ুক। কারও কোভিড হোক।” একেবারে অভিভাবিকার মতোই তাঁর সবদিকে নজর। রাজ্যে করোনা আক্রান্তের সংখ্যার উল্লেখ করেও সবাইকে সাবধান করে দিলেন যে, এই অতিমারী আবহে অনুষ্ঠানের ব্যপ্তি ছোট হলেও সাবধানতা কিন্তু নিজের কাছে। অতঃপর ফিল্ম ফেস্টিভ্যালের আমেজে গা ভাসালেও মাস্ক, স্যানিটাইজার ব্যবহার করা বাধ্যতামূলক। এবার চলচ্চিত্র উৎসবের থিম কান্ট্রি ইতালি। এবার চলচ্চিত্র উৎসবের উদ্বোধনী ছবি ‘অপুর সংসার’। করোনা আতঙ্ক যতই উৎসবের রোশনাইকে ফিকে করে দিক না কেন, ছবি নির্বাচনের ক্ষেত্রে এ বারও কোনও কার্পণ্য থাকছে না। ৮১টি পূর্ণ দৈর্ঘ্যের ফিচার ছবি, ৫০টি স্বল্প দৈর্ঘ্যের ছবি এবং তথ্যচিত্র দেখানো হচ্ছে এবছর। সব মিলিয়ে প্রায় ৪৫টি দেশের সিনেমা থাকছে এই উৎসবে। ৮টি প্রেক্ষাগৃহ মিলিয়ে চলবে চলচ্চিত্র উৎসব। চলচ্চিত্র উৎসবে প্রতিযোগিতার আসর থেকে সেরা ছবিকে রয়্যাল বেঙ্গল গোল্ডেন ট্রফি-র পাশাপাশি ৫১ লক্ষ টাকার পুরস্কারও দেওয়া হবে। কোভিড পরিস্থিতির কথা মাথায় রেখে এবার চলচ্চিত্র উৎসবে ই-টিকিটের ব্যবস্থা রাখা হয়েছে। মুখ্যমন্ত্রী রাজ চক্রবর্তীদের অনুরোধ করে, যাঁরা ই-টিকিট কাটতে পারেন না, তাঁদের যেন সহায়তা করা হয়। এদিন পরিচালক অনুভব সিনহা সহ চলচ্চিত্র উৎসবে উপস্থিত সকলকে ধন্যবাদ জানাতে ভুললেন না মমতা বন্দ্য়োপাধ্য়ায়। মুখ্যমন্ত্রীর কথায়, যাঁরা সিনেমায় কাজ করেন, তাঁদের জীবন কিন্তু সহজ নয়। তাঁদেরকেও অনেক পরিশ্রম করতে হয়। অনেককিছু ত্যাগ করতে হয়। এদিন আত্মবিশ্বাসের সুরে মমতা বন্দ্য়োপাধ্য়ায় বলেন, টলিউড একদিন বলিউড কেন হলিউডকেও পাল্লা দেবে। বর্তমান কঠিন পরিস্থিতির কথা মাথায় রেখে উপস্থিত সকলকে স্বাস্থ্য সাথী কার্ড করিয়ে নেওয়ার পরামর্শ দেন মুখ্যমন্ত্রী।