করোনায় আক্রান্ত হয়ে প্রয়াত হলেন বর্ষীয়ান সাহিত্যিক অনীশ দেব। মৃত্যুকালে তাঁর বয়স হয়েছিল ৭০ বছর। বেসরকারি একটি হাসপাতালে ভর্তি ছিলেন। মঙ্গলবার তাঁকে রক্ত দেওয়া হয়। তিনি ভেন্টিলেশনে ছিলেন। বুধবার সকাল ৭টা ১০-এ তাঁর মৃত্যু হয়। মঙ্গলবারই জানা গিয়েছিল, তিনি সংকটজনক। প্রয়োজন ছিল এবি পজিটিভ রক্তের। ফেসবুক-সহ সোশ্যাল মিডিয়ায় অনেকেই প্লাজমার খোঁজে পোস্ট শেয়ার করছিলেন। শেষ পর্যন্ত তা জোগাড় হলেও ফেরানো গেল না সাহিত্যিককে। অনীশবাবুর পরিবারের তরফে জানা গিয়েছে, বেশ কিছুদিন ধরেই অসুস্থ ছিলেন প্রবীণ লেখক। কার্ডিয়াক অ্যারেস্ট হওয়ায় তাঁকে হাসপাতালে ভর্তি করা হয়। সেখানেই তাঁর করোনা পরীক্ষা করা হলে রিপোর্ট পজিটিভ আসে। ক্রমশ শারীরিক অবস্থার অবনতি ঘটলে অনীশবাবুকে ভেন্টিলেশনে দেওয়া হয়। বুধবার সকালে শেষ নিঃশ্বাস ত্যাগ করেন তিনি। সাহিত্যিক অনীশ দেবের জন্ম ১৯৫১ সালে কলকাতায়। লেখালিখি শুরু করেন ১৯৬৮ সালে অধুনালুপ্ত ‘মাসিক রহস্য’ পত্রিকায়। দীর্ঘ লেখালেখির জীবনে কল্পবিজ্ঞান, ফ্যান্টাসি, রহস্য রোমাঞ্চ ধারায় অসামান্য সব লেখা বাংলার পাঠক উপহার পেয়েছে অনীশ দেবের থেকে। তাঁর উল্লেখযোগ্য উপন্যাস ও গল্পগ্রন্থ– ঘাসের শীষ নেই, সাপের চোখ, তীরবিদ্ধ, জীবন যখন ফুরিয়ে যায়, ভয়পাতাল, তেইশ ঘণ্টা ষাট মিনিট, ষাট মিনিট তেইশ ঘণ্টা, আমি পিশাচ, অশরীরী অলৌকিক ইত্যাদি। সম্পাদনা করেছেন সেরা কল্পবিজ্ঞান, সেরা কিশোর কল্পবিজ্ঞান ইত্যাদি গ্রন্থ। এছাড়াও জনপ্রিয় বিজ্ঞান বিষয়েও তাঁর প্রবল কৌতূহল ছিল। বিজ্ঞানের হরেকরকম, সহজ কথায় ইন্টারনেট, রোমাঞ্চকর ধুমকেতু, হাতে কলমে কম্পিউটার, বিজ্ঞানের দশদিগন্ত প্রভৃতি গ্রন্থে সেই নিদর্শন রয়েছে। এছাড়াও বহু অসামান্য সংকলনের সম্পাদনাও করেছেন তিনি। কলকাতা বিশ্ববিদ্যালয়ে পদার্থবিজ্ঞান বিভাগে অধ্যাপক হিসাবে কর্মজীবন শুরু করেন অনীশ। পরবর্তী সময়ে রাজাবাজার সায়েন্স কলেজে যোগ দেন। কয়েক বছর আগে অবসর নেওয়ার পরে এক বেসরকারি কলেজে কর্মরত ছিলেন। অধ্যাপনার পাশাপাশি সাহিত্যচর্চা করে গিয়েছেন আজীবন। ২০১৯ সালে কিশোর সাহিত্যে জীবনব্যাপী অবদানের জন্য পশ্চিমবঙ্গ সরকারের বিদ্যাসাগর পুরস্কারে সম্মানিত হন অনীশ দেব। এর আগে প্রাচীন কলাকেন্দ্র সাহিত্য পুরস্কার (১৯৯৮) ও ডঃ জ্ঞানচন্দ্র ঘোষ পুরস্কারে (১৯৯৯) সম্মানিত হয়েছেন তিনি। অনীশ দেবের প্রয়াণে শোকস্তব্ধ বাংলা সাহিত্য মহল। তাঁর মৃত্যুতে শেষ হয়ে গেল একটা অধ্যায়। পাঠক হারাল প্রিয় লেখককে।