আমেরিকার লস অ্যাঞ্জেলেসে অনুষ্ঠিত হল ৯৬তম অ্যাকাডেমি অ্যাওয়ার্ডস। এ বছর একাধিক অস্কার জেতার দৌড়ে এগিয়ে রয়েছে ক্রিস্টোফার নোলানের বায়োপিক ড্রামা ‘ওপেনহাইমার’। সেরা ছবি, সেরা পরিচালক-সহ মোট ১৩টি মনোনয়ন নিয়ে এগিয়ে ছিল সিলিয়ান মারফি পরিচালিত এই ছবি। মনোনয়ন পাওয়া অন্যান্য ছবির মধ্যে ছিল ‘বার্বি’, ‘পুওর থিংস’ ও ‘কিলার অব দ্য ফ্লাওয়ার মুন’। আমেরিকার লস অ্যাঞ্জেলেসে অনুষ্ঠিত হচ্ছে ৯৬তম অ্যাকাডেমি অ্যাওয়ার্ডস। এবছর কমেডিয়ান ও টক শো সঞ্চালক জিমি কিমেল এই অনুষ্ঠানের সঞ্চালনা করেছেন। বিলি আইলিশ ও রায়ান গসলিন তাঁদের সিনেমার অস্কার মনোনীত গান পারফর্ম করেন। এবারের শীর্ষস্থানীয় প্রেজেন্টারের তালিকায় ঞ্ছিলেন জেমি লি কার্টিস, জন মুলানে, ড্যোয়েন জনসন, ক্রিস হেমসওয়ার্থ, জেনিফার লরেন্স, আল পাচিনো প্রমুখ তারকারা।
দেখে নেওয়া যাক কে কোন বিভাগে হলেন সেরার সেরা-
সেরা ছবিঃ ওপেনহেইমার। পুরস্কার তুলে দেন আল পাচিনো। পুরস্কার গ্রহণ করেন প্রযোজক এমা থমাস। এই অস্কারের হাত ধরেই এবছর সাতটি অস্কার পেল ‘ওপেনহাইমার’।
সেরা অভিনেত্রীঃ এমা স্টোন। ‘পুওর থিংস’ ছবির জন্য সেরা অভিনেত্রীর অস্কার পেয়েছেন তিনি। তিনি বেলা বক্সটার চরিত্রে অভিনয় করেছেন।
সেরা অভিনেতাঃ মার্কিন অভিনেতা কিলিয়ান মারফি। ক্রিস্টোফার নোলানের ‘ওপেনহাইমার’ ছবিতে জে রবার্ট ওপেনহাইমারের চরিত্রে অভিনয়ের জন্য এই পুরস্কার পান তিনি। অস্কারে এটি মারফির প্রথম মনোনয়ন এবং তাঁর প্রথম জয়।
সেরা পরিচালকঃ ক্রিস্টোফার নোলান। ‘ওপেনহাইমার’ ছবির জন্য সেরা পরিচালকের পুরস্কার জিতেছেন তিনি।
ইন মেমোরিয়মঃ সোমবার অ্যাকাডেমি অফ মোশন পিকচার আর্টস অ্যান্ড সায়েন্সেস (এএমপিএএস) ৯৬তম অস্কার অনুষ্ঠানে ভারতীয় শিল্প নির্দেশক এবং প্রযোজনা ডিজাইনার নীতিন চন্দ্রকান্ত দেশাইকে শ্রদ্ধা জানায়। দেশাই চারবার শ্রেষ্ঠ শিল্প নির্দেশনার জন্য জাতীয় চলচ্চিত্র পুরস্কার লাভ করেছেন।
সেরা অরিজিনাল স্কোরঃ লুডভিগ গোরানসন। ব্ল্যাক প্যান্থারের পর এটি তাঁর দ্বিতীয় জয়।
সেরা গানঃ বিলি ইলিশ ও ফিনিয়াস। তারা এটি বার্বির গান হোয়াট ওয়াজ আই মেড ফরের জন্য জিতল। বিলি বলেন, এই গান, এই সিনেমার জন্য আমি কৃতজ্ঞ।
সেরা লাইভ অ্যাকশন শর্টঃ ওয়েস অ্যান্ডারসনের ‘দ্য ওয়ান্ডারফুল স্টোরি অব হেনরি সুগার’।
সেরা ডকুমেন্টারি ফিচারঃ ‘টুয়েন্টি ডেজ ইন মারিউপল’। এটি ইউক্রেনের প্রথম অস্কার। চলচ্চিত্রটিতে, মারিউপোল শহরে আটকে পড়া ইউক্রেনিয়ান সাংবাদিকদের একটি এপি দল রাশিয়ান আগ্রাসনের অত্যাচারের নথিতে তাদের কাজ চালিয়ে যাওয়ার জন্য লড়াই করে। একমাত্র আন্তর্জাতিক রিপোর্টার হিসাবে যারা শহরে থেকে যায়, তারা যুদ্ধের চিত্র তুলে ধরে, যেখানে দেখা যায়: মৃত শিশু, গণকবর, মাতৃসদনের বোমাবাজি, আরও অনেক কিছু।
সেরা ডকুমেন্টারি শর্টঃ ‘দ্য লাস্ট রিপেয়ার শর্ট’। ছবির বিষয়বস্তু হল, ১৯৫৯ সাল থেকে, লস অ্যাঞ্জেলেস মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের কয়েকটি শহরের মধ্যে একটি যা তার পাবলিক স্কুলের শিক্ষার্থীদের জন্য কোন খরচ ছাড়াই বাদ্যযন্ত্র সরবরাহ ও ঠিক করে। এই যন্ত্রগুলো, যার সংখ্যা প্রায় আশি হাজার, লস অ্যাঞ্জেলেসের শহরের কেন্দ্রস্থলের গুদামে মুষ্টিমেয় কারিগরদের দ্বারা রক্ষণাবেক্ষণ করা হয়। চলচ্চিত্রটি তাদের মধ্যে চারজনকে তুলে ধরে, প্রত্যেকে একটি অর্কেস্ট্রা বিভাগে বিশেষজ্ঞ, সেইসাথে ছাত্র যাদের জীবন মেরামতের দোকানের কাজের দ্বারা সমৃদ্ধ হয়েছে।
সেরা ফিল্ম এডিটিংঃ ‘ওপেনহাইমার’ ছবির জন্য জেনিফার ল্যাম। তাঁর কথায়, ‘প্রথম যখন স্ক্রিপ্টটা পড়েছিলাম, তখন ছিঁড়ে ফেলেছিলাম। যখন আপনি এমন একটি মুভিতে কাজ করেন যার স্ক্রিপ্ট খুব নিখুঁতভাবে পরিকল্পনা করা হয়, এবং তারপরে আপনাকে এটি সম্পাদনা করতে হবে। আমি চেয়েছিলাম, যখন আমি প্রথম স্ক্রিপ্টটি পড়েছিলাম, তখন দর্শক হিসাবে ছবিটা দেখে আমি কী অনুভব করতে পারি, তা অনুভব করতে। আর সেটা করা সত্যিই কঠিন’।
সেরা ভিজ্যুয়াল এফেক্টসঃ গডজিলা মাইনাস ওয়ান। চলচ্চিত্রটির ভিজ্যুয়াল এফেক্ট শটগুলির সমস্ত ৬১০টি ইয়ামাজাকির তত্ত্বাবধানে এবং কিয়োকো শিবুয়ার পরিচালনায় শিরোগুমির চোফু স্টুডিওতে ৩৫ জন শিল্পীর একটি ক্রু দ্বারা পরিচালিত হয়েছিল।
সেরা আন্তর্জাতিক ফিচারঃ ‘জোন অফ ইন্টারেস্ট’। এই ক্যাটেগরিতে এটি ইউকে-র তৃতীয় জয়।
সেরা কস্টিউম ডিজাইনঃ ‘পুওর থিংস’ এর জন্য ডিজাইনার হলি ওয়াডিংটন।
সেরা প্রোডাকশন ডিজাইনঃ পুওর থিংস আরেকটি জয় পেল। সেরা প্রোডাকশন ডিজাইনের পুরস্কার জিতেছে এই ছবি। পরিচালক ইয়র্গোস ল্যানথিমোস প্রোডাকশন ডিজাইন টিমকে একটি অসাধারণ পৃথিবী তৈরি করতে বলেছিলেন যা মাইকেল পাওয়েল এবং এমেরিক প্রেসবার্গারের ব্ল্যাক নার্সিসাসের পুরানো স্কুল শৈলীর একটি থ্রোব্যাক ছিল।
সেরা মেকআপ ও হেয়ারস্টাইলিংঃ ‘পুওর থিংস’-এর চিফ হেয়ার অ্যান্ড মেকআপ আর্টিস্ট নাদিয়া স্টেসি।
সেরা মৌলিক চিত্রনাট্যঃ ‘অ্যানাটমি অফ আ ফল’। পরিচালক-লেখক জাস্টিন ট্রাইট পুরস্কার গ্রহণ করার সময় বলেন, এই বছরটা বেশ উন্মাদনাপূর্ণ ছিল।
সেরা অ্যাডাপ্টেড স্ক্রিনপ্লেঃ ‘আমেরিকান ফিকশন’। চলচ্চিত্রটি একজন হতাশ ঔপন্যাসিককে নিয়ে, যিনি ব্ল্যাক বিনোদন থেকে লাভ করা প্রতিষ্ঠান থেকে বিরক্ত হয়ে পড়েছেন, যা ক্লান্ত এবং আক্রমণাত্মক ট্রপের উপর নির্ভর করে। তার বক্তব্য প্রমাণ করার জন্য, তিনি একটি কলমের নাম ব্যবহার করে নিজের একটি অদ্ভুত কালো বই লেখেন, একটি বই যা তাকে ভণ্ডামি এবং পাগলামির হৃদয়ে চালিত করে যা সে ঘৃণা করে বলে দাবি করে।
সেরা অ্যানিমেটেড ফিচারঃ ‘দ্য বয় অ্যান্ড দ্য হেরন’। ছবিটি হায়াও মিয়াজাকির সর্বশেষ ছবি। অস্কার নিতে হাজির হয়নি এই ছবির টিম।
সেরা অ্যানিমেটেড শর্টঃ ‘ওয়ার ইজ ওভার’। এটি জন এবং ইয়োকোর সঙ্গীত দ্বারা অনুপ্রাণিত এবং শন লেনন এবং ডেভ মুলিন্সের একটি যুদ্ধ-বিরোধী গল্প যা জন এবং ইয়োকোর যুদ্ধ-বিরোধী ছুটির গান ‘হ্যাপি জিমাস (ওয়ার ইজ ওভার)’ বৈশিষ্ট্যযুক্ত।
সেরা পার্শ্ব অভিনেত্রীঃ ‘দ্য হোল্ডওভার্স’-এর জন্য সেরা পার্শ্ব অভিনেত্রীর পুরস্কার পেয়েছেন দা’ভাইন জয় ব়্যান্ডলফ। কান্নাজড়িত কণ্ঠে তিনি বলেন, ‘ঈশ্বর অনেক ভালো’। অ্যানাটমি অফ অ্যা ফল-এর তারকা মেসিকে অস্কারের মঞ্চে তাঁর আসনে দেখা গেল। এই চলচ্চিত্রে অভিনয়ের পর মেসি বিশ্বব্যাপী জনপ্রিয়তা অর্জন করেন।