নাগরিকত্ব সংশোধনী বিল নিয়ে প্রতিবাদে আদিল-জুবিন-পাপন, দলত্যাগ বিজেপি নেতা তথা অভিনেতা যতীন বোরা-র

নাগরিকত্ব সংশোধনী বিল (Citizenship Amendment Bill) নিয়ে উত্তাল অসম। বিক্ষোভ, আন্দোলন, গণ অনশনে অগ্নিগর্ভ অসম। CAB নিয়ে বিরোধিতায় নেমেছে অসমবাসী। পিছিয়ে নেই বুদ্ধিজীবীরাও। নাগরিকত্ব সংশোধনী বিলের বিরোধিতায় পথে নেমেছেন তাঁরাও। আর ঠিক এই পরিস্থিতির মধ্যেই দলের সদস্যপদ থেকে ইস্তফা দিলেন অসমের বিজেপি নেতা তথা অভিনেতা যতীন বোরা। যদিও দল ছাড়ার কোনও কারণ ব্যক্ত করেননি অভিনেতা। তবে নাগরিকত্ব সংশোধনী বিল নিয়ে অসমের এই অগ্নিগর্ভ পরিস্থিতির জন্যই যে দলত্যাগ করতে বাধ্য হয়েছেন, যতিন ঘনিষ্ঠমহলে সেকথাই ঘুরছে। অন্যদিকে, নাগরিকত্ব সংশোধনী বিলের বিরোধিতায় পথে নেমেছেন অসমের ভূমিপুত্র গায়ক জুবিন গর্গ, পাপন, অভিনেতা আদিল হুসেন। এই পরিস্থিতিতে নিজেকে ঠিক রাখতে পারছেন না বলিউডের নামজাদা গায়ক পাপন। ‘অসম জ্বলছে’ বলেই দিল্লিতে কনসার্ট বাতিলের সিদ্ধান্ত নিলেন তিনি। টুইটে একথাই জানিয়ে দিয়েছেন পাপন। দিল্লির ইমপারফেক্টো শোরে অনুষ্ঠান করতে যাওয়ার কথা ছিল পাপনের। কিন্তু বলিউড গায়ক পাপন সিদ্ধান্ত নিয়েছেন এই শো করবেন না তিনি। একাধিক টুইটে পাপন তাঁর অনুষ্ঠান বাতিলের কারণ ব্যাখ্যা করেছেন। তিনি লিখছেন, “প্রিয় দিল্লি, আমি খুব দুঃখিত কনসার্টটি বাতিল করার জন্য। দিকে দিকে কারফিউয়ের জেরে আমার রাজ্য অসম কাঁদছে, জ্বলছে। এই পরিস্থিতিতে আমি মানুষকে গান শোনানোর অবস্থায় নেই। আমি জানি শেষ মুহূর্তে অনুষ্ঠান বাতিল করা উচিত নয়। কারণ ইতিমধ্যেই অনেকে টিকিট কেটে ফেলেছেন। আশা করি অনুষ্ঠানের আয়োজকরা সেদিকে খেয়াল রাখবেন। একদিন ওখানেই ঠিক অনুষ্ঠান করব, কথা দিচ্ছি আপনাদের। আমার অসুবিধাটা বোধহয় আপনারা বুঝতে পারবেন। অসম যেভাবে জ্বলছে তা দেখে সত্যিই আমার খুব দুঃখ হচ্ছে। অসমে মানবতাই আক্রান্ত। বছরের পর বছর ধরে অসমে এই অনুপ্রবেশ ঘটেই চলেছে। এটা আমাদের কাছে প্রাপ্য নয়। অসমের বহুত্ববাদ কীভাবে রাজ্যের সংস্কৃতির সঙ্গে আষ্ঠেপৃষ্ঠে জড়িয়ে আছে, সেদিকটাও দেখতে হবে।” জুবিনের কথায়, “একাত্তরের পর যদি ভগবানও আসেন, তাঁকেও অসমে জায়গা দেওয়া হবে না। এই CAB মানব না। জাতিদ্রোহী এক আইন পাশ করা হল। এর প্রতিবাদ চলবে। অসম কখনও বাংলাদেশিদের চারণভূমি হতে পারে না।” আদিল হুসেন বলেছেন, “অসম খুব কষ্টে আছে। দীর্ঘ সময় ধরে চলা অচলাবস্থা কাটিয়ে অসম সদ্য স্বাভাবিক হতে শুরু করেছিল। তবে আমাদের নেতা-মন্ত্রীরা অসমের জটিল পরিস্থিতি এবং সাংস্কৃতিক কাঠামোর ব্যাপারে বুঝতে ব্যর্থ হয়েছেন। তাই নাগরিকত্ব সংশোধনী বিল জোর করে চাপিয়ে দেওয়া সরকারের সর্বকালের সেরা মূর্খতা ছাড়া আর কিছুই নয়। এই NRC ও CAB-র শোরগোলের মধ্যে আমি খুবই চিন্তিত ও দুঃখিত একটি ব্যাপারে। মানুষ হওয়ার মৌলিক ধর্ম হারিয়েছে মানুষ। এই লড়াইতে কেউই জিততে পারবে না। ক্ষতি হবে একটাই জিনিসের, তা হল মানবিকতা ।”তিনি আরও লিখেছেন, “আমাদের যখন জন্ম হয়েছিল আমাদের পরিবার খুশি হয়েছিল কারণ তাঁরা মানুষের জন্ম দিয়েছিল, কাঠবিড়ালি নয়। আমরা প্রথমত মানুষ। এই বেসিক ধর্মটাই যদি আমরা রক্ষা করতে না পারি তাহলে নিজেদের মুসলিম, হিন্দু, অসমিয়া, বাঙালি এসব বলার কী মানে?”

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *