মুম্বইয়ে ক্রান্তি ময়দানের জমায়েতে গলা মেলালেন বলি সেলেবরা

সংশোধনী নাগরিকত্ব আইনের বিরুদ্ধে  দিল্লি, বেঙ্গালুরু, কলকাতা, লখনৌসহ অন্যান্য বেশকিছু শহরে বিক্ষোভের আগুন জ্বলছে। দেশের বিভিন্ন শ্রেণির মানুষ প্রতিবাদে পথে নেমেছেন। সাধারণ মানুষের সঙ্গে পা মিলিয়েছেন সেলেবরাও। সংশোধিত নাগরিকত্ব আইনের প্রতিবাদ এবার ছড়িয়ে পড়ল দেশের বাণিজ্যনগরী মুম্বইয়ে। ক্রান্তি ময়দানে জমায়েতে উপস্থিত থাকার ডাক শোনা যাচ্ছিল অনেক দিন থেকেই । এই জমায়েত আটকাতে প্রশাসনিক স্তর থেকে বিভিন্ন সময়ে সতর্কবাণী দেওয়া হয়েছে। কিন্তু সেই সব উপেক্ষা করে, এক বিশাল সংখ্যক মানুষ CAA-র প্রতিবাদ জানাল ময়দানে নেমে। বৃহস্পতিবার বিকেল পাঁচটা নাগাদ মুম্বইয়ের চার্চগেট স্টেশনে আন্দোলনের জন্য জমায়েত শুরু হয়। তারপর সেখান থেকে মিছিল যায় ক্রান্তি ময়দানে।  শহর মুম্বই সাক্ষী থাকল ‘ইউনাইটেড ইন্ডিয়া’-র ।  এদিন প্রায় হাজার খানেক মানুষ ক্রান্তি ময়দানে জমায়েত হয়েছিল। আমআদমির সঙ্গে প্রতিবাদে অংশ নিয়েছিলেন সেলিব্রিটিরাও। ফারহান আখতার, অনুরাগ কাশ্যপ, অদিতি রাও হায়দারি, স্বরা ভাস্কর, হুমা কুরেশি, কবীর খান, রাকেশ ওমপ্রকাশ মিশ্র, অনুভব সিনহা, জাভেজ জাফরি, অর্জুন মাথুর, রাহুল বোস, জোয়া আখতার, সুশান্ত সিংয়ের মতো তারকারা সহ অনেকে উপস্থিত ছিলেন ময়দানে। মিছিলের পুরোভাগ ছিলেন তাঁরা। ফারহান এক সর্বভারতীয় সংবাদমাধ্যমকে বলেন, “ভারতের নাগরিক হিসেবে এবং ছোটো থেকে ভারতকে যেভাবে চিনেছি, সেই পরিপ্রেক্ষিতে আমায় গলা তুলতেই হত । সব ঠিক থাকলে কেন এত মানুষ জড়ো হত এখানে ? কোনওকিছুর বিরুদ্ধে প্রতিবাদ করা আমাদের গণতান্ত্রিক অধিকার । তাই মানুষ প্রতিবাদ করছেন । আমার মনে হয়, যেটা পরিকল্পনা করা হয়েছিল ও যেটা আদতে হচ্ছে, দু’টোর মধ্যে একটা পার্থক্য রয়েছে । যদি আপনারা একটু বিশদে গিয়ে দেখেন, তাহলে দেখবেন যে, পরে কোনও সমস্যা তৈরি হতেই পারে । আর শুধু মুম্বইতে নয়, অসম, দিল্লি, বেঙ্গালুরু, হায়দরাবাদ সমস্ত জায়গায় প্রতিবাদ হচ্ছে।”  জমায়েতে অভিনেত্রী স্বরা ভাস্কর ক্রান্তি ময়দানের মঞ্চে বক্তৃতা দিতে গিয়ে ‘আজাদি’ স্লেগান তোলেন। CAA, NRC, বেকারত্ব ইত্যাদি ইস্যু ছিল তাঁর স্লোগানের বিষয়।  স্বরা বললেন, “এই দেশে CAA ও NRC-র কোনও প্রয়োজন নেই । যদি এই সিস্টেমের মধ্যে থেকে আদনান স্বামীকে নাগরিকত্ব দেওয়া যায়, তাহলে অন্যান্য হিন্দু রিফিউজিদের নাগরিকত্ব দিতে কী সমস্যা ? কেন সংবিধানের পরিবর্তন করতে হবে ? আমরা একটা মতাদর্শের ভিত্তিতে এই প্রতিবাদ করছি । আমাদের সঙ্গে কোনও খারাপ মানুষ, যে গালিগালাজ করে, তার তুলনা করবেন না । আমরা এখানে কেউ কোনও গালিগালাজ করছি না । গান্ধিজিও তাঁর নিজের মতাদর্শের জন্য লড়াই করেছেন, তার মানে কি তিনি গালিগালাজ করেছেন ?” অভিনেত্রী হুমা কুরেশি বলেন, যে বিক্ষোভ হিংসা ছড়াচ্ছে, তা অবশ্যই দমন করা উচিত। যারা হিংসা ছড়াচ্ছে, তাদের অবশ্যই শাস্তি পাওয়া দরকার। কিন্তু তার মানে এই নয় যে প্রতিবাদ হবে না। সুশান্ত সিং জানিয়েছেন, এর আগে তিনি জামিয়া মিলিয়া ছাত্রছাত্রীদের পাশে দাঁড়িয়েছিলেন। তার জন্য ‘সাবধান ইন্ডিয়া’ থেকে কাটা গিয়েছে তাঁর নাম। কিন্তু তাতে তাঁর কিছু আসে যায় না। আজ দেশজুড়ে পড়ুয়ারা প্রতিবাদে নেমেছেন। তিনি তাঁদের পাশে আছেন। বড়দের উচিত এই সময় ছোটদের সমর্থন করা। তাদের পাশে দাঁড়ানো। তিনি সেটাই করছেন। এছাড়া অনেকে টুইটারেও আন্দোলন সমর্থনের কথা বলেছেন। দিয়া মির্জা টুইটে লিখেন, ‘আমার মা হিন্দু ,আমার বায়োলজিক্যাল বাবা খ্রিস্টান, কিন্তু আমার পালক পিতা একজন মুসলমান। আমার সমস্ত রকমের কাগজপত্রে ধর্মের জায়গায় আমি ফাঁকা রাখি, ধর্ম কি ঠিক করবে আমি ভারতীয় কিনা ? এরকম কখনো হয়নি আর আশা করি কখনও হবেও না। এক ভারত’। বলিউড অভিনেতা সঞ্জয় খানের মেয়ে জুয়েলারি ডিজাইনার ফারহা খান দিয়ার টুইটে রিটুইট করে লিখেছেন, ‘আমার বাবা মুসলিম, আমার মা পার্সি, আমার ভাই-বোনেরা হিন্দুদের বিয়ে করেছে। আমার বাচ্চাদের ভাই বোন মুসলিম, হিন্দু ও খ্রিস্টান। আমরা সব ধর্মের অনুষ্ঠান একসঙ্গে পালন করি। আমরা আসলে মানবতার ধর্ম পালন করি। যেকোনো ফর্মেই আমি ভারতীয় লিখি। ধর্ম কখনই আমার পরিচয় নয়’।

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *