দীর্ঘ অপেক্ষার পর ঘোষিত হল ৬৭তম জাতীয় পুরস্কার বিজয়ীদের নাম। নয়াদিল্লিতে অনুষ্ঠিত সাংবাদিক সম্মেলনে বিজয়ীদের নাম ঘোষণা করা হয়। সেরা বাংলা ছবির সম্মান পেল সৃজিত মুখোপাধ্যায় পরিচালিত ও প্রসেনজিৎ চট্টোপাধ্যায় অভিনীত ছবি ‘গুমনামী’। ‘গুমনামী’ জাতীয় পুরস্কার পাওয়ার পর ফেসবুকে একটি আবেগঘন পোস্ট শেয়ার করেছেন সৃজিত। সেই পোস্টে নেতাজীকে ‘O Supreme Leader’ বলে বিশেষিত করেছেন সৃজিত। সেরা মৌলিক চিত্রনাট্য এবং সেরা সঙ্গীত পরিচালনার জন্য সম্মান পেল কৌশিক গঙ্গোপাধ্যায় পরিচালিত ‘জেষ্ঠ্যপুত্র’। পরিচালক কৌশিক গঙ্গোপাধ্যায় জোড়া পুরস্কার উত্সর্গ করলেন প্রয়াত পরিচালক ঋতুপর্ণ ঘোষকে। অন্যদিকে সেরা অভিনেতারর পুরস্কার পেলেন দু’জন। ‘ভোসলে’ ছবিতে অভিনয়ের জন্য মনোজ বাজপেয়ী এবং ‘তামিল’-এ অভিনয়ের জন্য ধনুশ। ‘মণিকর্ণিকা’ এবং ‘পাঙ্গা’র জন্য সেরা অভিনেত্রী হলেন কঙ্গনা রানাউত। প্রয়াত সুশান্ত সিং রাজপুত অভিনীত ‘ছিছোরে’ পেল সেরা ছবির সম্মান। সুশান্ত সিং রাজপুত আজ আর নেই। তাই তিনি জানতেও পারলেন না, কিংবা হয়তবা পারলেন। সে যাই হোক, ৬৭তম জাতীয় পুরস্কারের মঞ্চে উচ্চারিত সুশান্ত সিং রাজপুতের নাম। এই জাতীয় পুরস্কার সুশান্তকেই উৎসর্গ করলেন ছবির প্রযোজক সাজিদ নাদিয়াদওয়ালা। সাজিদ নাদিয়াদওয়ালার কথায়, তিনি ইনস্টাগ্রাম পোস্টে লিখেছেন, ”এই পুরস্কার আমরা সুশান্তকে উৎসর্গ করছি। আমরা ওঁকে হারানোর ক্ষতি এখনও কাটিয়ে উঠতে পারিনি। আশারাখি, এই পুরস্কার সুশান্তের পরিবার ও অনুরাগীদের কাছে কিছুটা হলেও আনন্দ এনে দেবে।” ছবির পরিচালক নীতিশ তিওয়ারির কথায়, ”এটা আমাদের কাছে চমক ছিল। কারণ আমরা এটা আশাও করিনি। এক্ষেত্রে আমার হৃদয়ে এই মুহূর্তে মিশ্র অনুভূতি রয়েছে। এক পুরস্কার জয়ের আনন্দ, অন্যদিকে হৃদয়ের কাছের একজনকে হারানোর দুঃখ। তবে আমি নিশ্চিত সুশান্ত যেখানেই থাকুন, এই জয়ে তিনি খুশিই হবেন।” সুশান্তের সহ অভিনেতা তাহির রাজ ভাসিনও ছবির সেটের নানান মুহূর্ত সকলের সঙ্গে ভাগ করে নিয়েছেন। তিনিও অকপটে স্বীকার করেছেন সুশান্তকে ছাড়া এ গল্প সম্ভব হত না। ‘ছিছোড়ে’ ছবিটিতে দুটি বয়সের ভূমিকায় সুশান্ত সিং রাজপুতের অভিনয় মুগ্ধ করেছে দর্শকদের। জানা যায়, ছবিটিতে নিজের চরিত্র পারফেক্ট করে তুলতে অনেক পরিশ্রমই করেছিলেন অভিনেতা। তাঁর সেই পরিশ্রমের সাফল্য এল। তবে একটু দেরিতেই। মহাকাশ প্রেমী সুশান্ত হয়ত অন্য জগত থেকেই জানলেন সেই সাফল্যের কথা। সেরা সহ-অভিনেতা বিজয় সৎপতি এবং সহ-অভিনেত্রীর মুকুট গেল পল্লবী যোশির মাথায়। সোমবার বেস্ট বুক অব সিনেমার জাতীয় পুরস্কার ঘোষণা করেন শৈবাল চট্টোপাধ্যায়। এই বিভাগে সেরার সম্মান পেল অশোক রাহানের মারাঠি বই ‘দ্য ম্যান হু ওয়াচেস’। নন-ফিচার ফিল্ম বিভাগে বেস্ট ফিল্ম সমালোচক হিসেবে এ বছর সম্মানিত হলেন সোহিনী চট্টোপাধ্যায়। একদিকে ‘গুমনামী’, অন্যদিকে ‘জেষ্ঠ্যপুত্র’। ৬৭তম জাতীয় পুরস্কারের মঞ্চে যে দু’টি বাংলা ছবি পুরস্কার পেয়েছে, তার দু’টিতেই কমন ফ্যাক্টর প্রসেনজিৎ চট্টোপাধ্যায়। পুরস্কারের খবর ঘোষণা হওয়ার পর প্রসেনজিৎ বললেন, “আমি সত্যিই খুব খুশি হয়েছি। এরকম একটা সময়ে গুমনামী সেরা ছবি পেয়েছে, স্ক্রিন প্লে রাইটার সৃজিত পেয়েছেন, কৌশিক গঙ্গোপাধ্যায় পেয়েছেন জেষ্ঠ্যপুত্রের জন্য, আমি খুব খুশি। দু’টো ছবিতে আমি অভিনয় করেছি। দু’টোই আমার জীবনের খুব গুরুত্বপূর্ণ চরিত্র। অবশ্যই একটা নেতাজী সুভাষ বোস এবং গুমনামী। আর জেষ্ঠ্যপুত্র আমার কাছে খুব গুরুত্বপূর্ণ ছবি। আমার, ঋত্বিকের খুব ভাল কাজ কৌশিকের পরিচালনায়।” সৃজিত এবং প্রসেনজিৎ ছাড়াও আলাদা করে ‘জেষ্ঠ্যপুত্র’-এর জন্য প্রবুদ্ধ বন্দ্যোপাধ্যায়ের কথা উল্লেখ করলেন প্রসেনজিৎ। তাঁর কথায়, “খুব ভাল একটা সময়। সৃজিত এবং কৌশিকের জন্য খুব খুশি আমি। আর প্রবুদ্ধর জন্য তো…, আমি ওর বিশাল বড় ফ্যান। সব মিলিয়ে অসাধারণ সময়। ঈশ্বরের আশীর্বাদে চারটে পুরস্কার এসেছে। আর দু’টো ছবিরই অংশ আমি। এটা সবার ভালবাসা বলা যেতে পারে। এটা বাংলা ছবির জয়।”
এক নজরে জাতীয় চলচ্চিত্র পুরস্কার বিজয়ী তালিকা:
১. সেরা বাংলা ছবি: গুমনামী
২. সেরা হিন্দি সিনেমা – ছিছোরে
৩. সেরা সঙ্গীত পরিচালনা: প্রবুদ্ধ বন্দ্যোপাধ্যায় (জ্যেষ্ঠপুত্র)
৪. কাহিনি অবলম্বনে রচিত সেরা চিত্রনাট্য: সৃজিত মুখোপাধ্যায় (গুমনামী)
৫. সেরা মৌলিক চিত্রনাট্য: কৌশিক গঙ্গোপাধ্যায় (জ্যেষ্ঠপুত্র)
৬. সেরা হিন্দি ছবি: ‘ছিছোরে’ (সুশান্ত সিং রাজপুত অভিনীত শেষ ছবি)
৭. সেরা অভিনেত্রী: কঙ্গনা রানাওয়াত (‘মনিকর্ণিকা: দ্য কুইন অব ঝাঁসি’ ও ‘পঙ্গা’-র জন্য়)
৮. সেরা অভিনেতা: মনোজ বাজপেয়ী (‘ভোঁসলে’ ছবির জন্য ) ও ধনুশ (তামিল ছবি ‘অসুরণ’-এর জন্য)
৯. সেরা প্রচারমূলক ছবি: বৌদ্ধায়ণ মুখোপাধ্যায় (দ্য শাওয়ার)
১০. সেরা চিত্রনাট্য় (সংলাপ রচয়িতা): বিবেক অগ্নিহোত্রী (দ্য় তাশখন্ত ফাইলস)
১১. সেরা চিত্রগ্রহণ: জাল্লিকাট্টু
১২. সেরা পরিচালক: সঞ্জয় পূরণ সিং চৌহান (বাহাত্তর হুরেঁ)
সাধারণত জাতীয় পুরষ্কার জয়ীদের হাতে পুরস্কার তুলে দেন রাষ্ট্রপতি। যদিও ৬৬তম জাতীয় পুরস্কারের মঞ্চে পুরস্কার প্রদান করেছিলেন তৎকালীন ভাইস প্রেসিডেন্ট ভেঙ্কাইয়া নাইডু। এ বার কার হাত থেকে বিজেতারা পুরস্কার পাবেন, তা এখনও স্পষ্ট নয়।
https://www.instagram.com/p/CMuR2SHhpGR/?utm_source=ig_embed