ঈশিতা উপাধ্যায়ঃ নেতাজি ইন্ডোর স্টেডিয়ামের নক্ষত্রখচিত মঞ্চে মহাসমারোহে সূচনা করা হল ২৫তম কলকাতা আন্তর্জাতিক চলচ্চিত্র উৎসব-এর। টলিউড থেকে বলিউড আজ উৎসবের মঞ্চে মিলেমিশে একাকার হয়ে গিয়েছে। চলচ্চিত্র উৎসবের ফোকাস কান্ট্রি জার্মানি। উৎসবের সিগনেচার টিউন কম্পোজ করেছেন বিক্রম ঘোষ। চেয়ারম্যান রাজ চক্রবর্তীর উপস্থিতিতে নতুন লোগো উদ্বোধন হল অনুষ্ঠান মঞ্চে। অনুষ্ঠান সঞ্চালনার দায়িত্বে ছিলেন যিশু সেনগুপ্ত এবং পরমব্রত চট্টোপাধ্যায়। মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়-এর আমন্ত্রণে সাড়া দিয়ে উৎসবে হাজির হয়েছিলেন বাংলার ব্র্যান্ড অ্যাম্বাসাডার বলিউড বাদশাহ শাহরুখ খান। শাহরুখকে সংবর্ধনা দিয়ে বরণ করে নিলেন সাংসদ নুসরত জাহান। বাংলার সঙ্গে তাঁকে পরিচয় করানোর জন্য সৌরভ গঙ্গোপাধ্যায়কে ধন্যবাদ জানান শাহরুখ। ভারতীয় চলচ্চিত্র ইতিহাসকে সমৃদ্ধ করার জন্য বাংলার পরিচালকদের ধন্যবাদও জানালেন। কালজ্বয়ী অভিনেত্রী রাখি গুলজারের উপস্থিতিতে উৎসব মঞ্চ যেন হয়ে উঠেছিল আরও উজ্জ্বল। রাখী গুলজারকে সংবর্ধনা জানালেন দেব। তিনি মঞ্চে দাঁড়িয়ে বাংলাতেই বক্তৃতা দেন। তিনি বলেন, “আমি এই বাংলার মেয়ে। আমার ধমনীতে বাংলা রয়েছে। আজ এই উৎসব বিগত ২৫ বছর ধরে চলছে। বাংলার মেয়ে হিসেবে আমি গর্বিত। আজকে এখানে যারা উপস্থিত, তাদের জানাই আমার শ্রদ্ধা, শুভকামনা। আপনারা ভাল থাকুন। আমি অনেক ফিল্ম ফেস্টিভ্যাল দেখেছি, এত আন্তরিকতা কোথাও দেখিনি।” এরপর মঞ্চেই তিনি শাহরুখকে দিয়ে গাওয়ালেন “ও আমার দেশের মাটি, তোমার পরে ঠেকাই মাথা।” এছাড়াও উপস্থিত ছিলেন ভারতীয় ক্রিকেট দলের প্রাক্তণ অধিনায়ক সৌরভ গাঙ্গুলি। এই প্রথমবার কলকাতা চলচ্চিত্র উৎসবের মঞ্চে উপস্থিত ছিলেন সদ্য বিসিসিআই চেয়ারম্যান তথা বাংলার ‘দাদা’ সৌরভ গঙ্গোপাধ্যায় এবং তাঁর স্ত্রী ডোনা গঙ্গোপাধ্যায়। সৌরভকে সংবর্ধনা জানালেন জিৎ গঙ্গোপাধ্যায়। সৌরভ বলেন, “আমি বিশেষ কোনও স্পিচ তৈরি করে আসিনি। ধন্যবাদ মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়কে আমাকে আমন্ত্রণ জানানোর জন্য। এবার শতবর্ষ পূরণ হল বাংলা সিনেমার। এই শহর দেখেছে সত্যজিত রায়, মৃণাল সেন, ঋত্বিক ঘটককে। যার জন্য সারা বিশ্ব চেনে ভারতীয় সিনেমা এবং বাংলা সিনেমাকে। সিনেমা নিয়ে নতুন প্রজন্মের উৎসাহ দেখলেও ভাল। এই কর্মযজ্ঞের সঙ্গে জড়িত সবাইকে ধন্যবাদ। কলাকুশলী থেকে অভিনেতা-অভিনেত্রী সবাইকে শ্রদ্ধা জানাই। যারা বাংলা ছবিকে আজ এই উচ্চতায় এনে দাঁড় করিয়েছেন। অনেকেই সিনেমা রিলিজ করতে পারেন না, তাদের জন্য দুয়ার খুলে দিয়েছে এই ফিল্ম ফেস্টিভ্যাল।” এছাড়াও উপস্থিত ছিলেন বলিউডের বিশিষ্ট চিত্র পরিচালক মহেশ ভাট। এবার অবশ্য অসুস্থতার কারণে আমন্ত্রণ থাকা সত্ত্বেও কলকাতা চলচ্চিত্র উৎসবের উদ্বোধনী অনুষ্ঠানে আসতে পারেননি অমিতাভ বচ্চনকে। থালি গার্ল হিসেবে সাহায্য করলেন শ্রাবন্তী চট্টোপাধ্যায়। উৎসব মঞ্চে উপস্থিত গৌতম ঘোষ, সন্দীপ রায়, কৌশিক গঙ্গোপাধ্যায়, সৃজিত মুখোপাধ্যায়। অভিনেতা রঞ্জিত মল্লিক, মাধবী মুখোপাধ্যায়, তৃণমূলের তিন তারকা সাংসদ তথা টলিউড অভিনেতা দেব ও অভিনেত্রী নুসরত জাহান এবং মিমি চক্রবর্তী। এছাড়াও, চলচ্চিত্র উৎসবের উদ্বোধনী অনুষ্ঠানে সাক্ষী থাকতে হাজির ছিলেন কোয়েল মল্লিক, শুভশ্রী গঙ্গোপাধ্যায়, রুক্মিনী মৈত্র, ঋত্বিক চক্রবর্তী, সোহম চক্রবর্তী, তনুশ্রী চক্রবর্তী, প্রিয়াঙ্কা সরকার, সৌরসেনী মৈত্র, অঙ্কুশ, পাওলি দাম, শতাব্দী রায়, ইন্দ্রানী হালদার-সহ আরও অনেকে। এবারে চলচ্চিত্র উৎসবে ৭৬টি দেশের ৩৬৬টি ছবি দেখানো হবে। উৎসবে দেখানো হবে মোট ৯২ টি শর্ট ফিল্ম ও ৫৭ টি ডকুমেন্টারি । থ্রিডি ছবিগুলি দেখানো হবে বিজলি ও প্রিয়া সিনেমা হলে। অন্যান্য ছবির স্ক্রিনিং হবে নন্দন ১ ও ২, নবীনা, অজন্তা, অবনী, নজরুল তীর্থ, শিশির মঞ্চ, রবীন্দ্র সন্দন, আইনক্স সিটি সেন্টার সহ আরও বেশকিছু প্রেক্ষাগৃহে। ২৫তম এই চলচ্চিত্র উৎসবে উদ্বোধনী ছবি হিসেবে দেখানো হয় সত্যজিৎ রায়ের ছবি ‘গুপি গাইন, বাঘা বাইন’। এই সিনেমাটির এ বছর ৫০ তম বর্ষপূর্তি। ছবিটি থ্রিডি-তে দেখানো হবে। অস্কারজয়ী জার্মান পরিচালক ফোলকার স্লোয়েনডর্ফ এদিনের অনুষ্ঠানে উপস্থিত ছিলেন। ৯ নভেম্বর, শনিবার নন্দন ১-এ দেখানো হবে তাঁর পরিচালিত ‘টিন ড্রাম’। যে ছবির জন্য তিনি সেরা পরিচালকের অস্কার পেয়েছিলেন। মাস্টারক্লাসও নেবেন তিনি। নভেম্বরের ১৪ ও ১৫, পরপর দু’দিন। আর এক বিশেষ অতিথি, হলিউডের বিশিষ্ট অভিনেত্রী অ্যান্ডি ম্যাকডাওয়েলও উপস্থিত ছিলেন এদিনের অনুষ্ঠান মঞ্চে। তিনিও তাঁর হলিউডের অভিজ্ঞতা নিয়ে নেবেন একটি মাস্টারক্লাস। আগামী ১৫ তারিখ পর্যন্ত চলবে কলকাতা আন্তর্জাতিক চলচ্চিত্র উৎসব।কলকাতা চলচ্চিত্র উৎসবে প্রিয় ভাই শারুখের উদ্দ্যেশে মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় বলেন,”শাহরুখ নো ছুট্টি, তাহলে কাট্টি।” এরপর মমতার মুখে শাহরুখের ভূয়সী প্রশংসা। বললেন, ” আমরা সবাই মনে করি ও আমাদের খুব প্রিয়। আজ সারা পৃথিবীতে নাম করেছে। ও খুব সিম্পল। বেস্ট বয়। অহংকার নেই। ঔদ্ধত্য নেই। মানুষকে ভালবাসে। মানবিকতাকে ভালবাসে।” নজরুলের একই বৃন্তে দুটি কুসুমের মতো মমতার সংযোজন, একদিকে শাহরুখ। একদিকে সৌরভ। আমার ভীষণ ভালো লেগেছে।” মহেশ ভট্ট ও শাহরুখ খানকে বাংলায় দুর্গাপুজো দেখার আমন্ত্রণও জানান মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়। বিদেশি অতিথিদেরও একবার দুর্গাপুজোয় আসার আহ্বান করেন তিনি।