আজ থেকে শুরু হল কেন্দ্রীয় সরকারের উদ্যোগে আন্তর্জাতিক বিজ্ঞান চলচ্চিত্র উৎসব। মূল অনুষ্ঠান হচ্ছে ‘সত্যজিৎ রায় ফিল্ম অ্যান্ড টেলিভিশন ইনস্টিটিউট’-এ। আগামী ৮ নভেম্বর পর্যন্ত চলবে এই উৎসব। এই উৎসব হচ্ছে কেন্দ্রের বিজ্ঞান ও টেকনোলজি, আর্থ সায়েন্সেস এবং স্বাস্থ্য-পরিবার কল্যাণ মন্ত্রকের উদ্যোগে। উৎসবে একগুচ্ছ দেশি-বিদেশি বিজ্ঞানভিত্তিক ছবি দেখানো হবে। পাশাপাশি আমজনতার দরবারে বিজ্ঞানকে পৌঁছে দেওয়ার বিষয়ে আলোচনা ও সেমিনারও করা হবে। উৎসবের প্রচার পুস্তিকায় আচার্য প্রফুল্লচন্দ্র রায়, সত্যেন্দ্রনাথ বসু, মেঘনাদ সাহার ছবির পরেই দেওয়া হয়েছে অক্ষয় কুমার এবং জন আব্রাহামের ছবি। উৎসবে প্রচার পুস্তিকায় যে ছ’দফা বিশেষ দ্রষ্টব্য দেওয়া হয়েছে তাতে আলাদা করে অক্ষয় কুমারের ‘মিশন মঙ্গল’ আর জন আব্রাহামের ‘পরমাণু: দ্য স্টোরি অফ পোখরান’ বিশেষ প্রদর্শনের প্রসঙ্গ উল্লেখ করা হয়েছে। এই ঘটনা সামনে আসতেই প্রশ্ন উঠছে প্রবল ভাবে। পুরোদস্তুর বাণিজ্যিক মশলায় মাখানো এমন দু’টি ছবি দর্শকদের মধ্যে সত্যিই কি বিজ্ঞান সচেতনতা বাড়াবে? ‘সায়েন্স কমিউনিকেশন: প্যাকেজিং সায়েন্স ফর পাবলিক ইন্টারেস্ট’ আলোচনা সভার প্রধান অতিথি বিশিষ্ট বিজ্ঞানী এবং হোমি ভাবা চেয়ার প্রফেসর বিকাশ সিংহ-কে এ বিষয়ে প্রশ্ন করা হলে তিনি বলেন, ‘বিশেষ কিছু বলার নেই। তবে আমাদের দেশে বিজ্ঞান প্রসারের নামে বিরাট হল্লা চলছে। কোটি কোটি টাকা খরচ হচ্ছে। অথচ ছেলেমেয়েরা গবেষণার জন্য প্রয়োজনীয় অর্থ পাচ্ছে না। এটা একেবারেই ঠিক নয়।’ উৎসবে বিশেষ অতিথি হিসেবে আমন্ত্রিত থাকছেন পরিচালক বুদ্ধদেব দাশগুপ্ত। এই ছবি দু’টির নির্বাচন নিয়ে একেবারেই ওয়াকিবহাল নন। তিনি জানান ‘আমি যে ধরনের ছবি দেখি, তার সঙ্গে এই ছবিগুলির কোনও সম্পর্ক নেই। তাই দেখা হয়নি। বিজ্ঞান সচেতনতার ব্যাপারে এগুলি আদৌ সহায়ক হবে কিনা, মন্তব্য করা উচিত হবে না।’ বিজ্ঞানী এবং দীর্ঘদিন ধরে বিজ্ঞান সচেতনতার কাজে যুক্ত পার্থ ঘোষের মতে, ‘ছবি বলিউডে বা টলিউডে তৈরি হল কি না, সেটা বড় কথা নয়। ‘স্টার ট্রেক’ তো হলিউডে তৈরি হয়েছিল। ছবিটা বিজ্ঞানের ব্যাপারে আমাদের উৎসাহী করছে কি না, কল্পনাকে উসকে দিচ্ছে কি না, সেটাই আসল কথা। আমাদের দেশে বিজ্ঞানের ব্যাপারে সাধারণ ভাবে উৎসাহ কম। তার একটা অন্যতম কারণ ফিল্ম ইন্ডাস্ট্রি বিষয় হিসাবে এখনও তেমন বিজ্ঞানকে ব্যবহার করেনি। এখন যদি সেটা হয়, তা হলে তা খুবই সদর্থক। তবে ছবি দু’টি আমি দেখিনি। তাই বিজ্ঞান প্রসারের কাজে এগুলি লাগবে কি না, মন্তব্য করতে পারছি না।’ তবে বিজ্ঞান চলচ্চিত্র উৎসবে এসে এহেন বলিউড ফিল্ম দেখে দর্শকের কী প্রতিক্রিয়া হয় সেটাই এখন দেখার।