বছর শেষে ফিরে দেখা বলিউডের সেরা সিনেমা

এবছর বলিউডে ভালো সিনেমার বেশ তালিকা ছোট। তবে ভালোর তালিকায় ছয়টি সিনেমার নাম উঠে এসছে। এই সিনেমাগুলির  গল্পে এসেছে নতুন চিন্তা, নতুন প্রশ্ন বা সমাজের অদেখা কোনো আঙিনা। এমনকি ফর্মুলা সিনেমায়ও এসেছে ফর্মুলা-বিপরীত বক্তব্য।

এক ঝলকে বলিউডের সেরা ছয় সিনেমাঃ

আর্টিকেল ১৫ : বর্ণপ্রথার এমন একটি দিক উঠে এসেছে, যা অনেক দিন হিন্দি মূলধারার সিনেমায় দেখা যায়নি। এ কারণে অনুভব সিনহা পরিচালিত ‘আর্টিকেল ১৫’ মুক্তির আগে ও পরে ছিল আলোচনায়। এমনকি বলিউডে বিদ্যমান বর্ণবাদ-স্বজনতোষণের উপস্থাপনও এই চলচ্চিত্র। উত্তরপ্রদেশের বদায়ুঁর আলোচিত একটি ধর্ষণ মামলা নিয়ে তৈরি হয় ‘আর্টিকেল ১৫’। অভিযুক্তদের নামের তালিকা প্রকাশ্যে এলে দেখা যায় সবাই ব্রাহ্মণ সম্প্রদায়ের। এরপর পুলিশের বিরুদ্ধে মামলায় অবহেলার অভিযোগ ওঠে। এও অভিযোগ, তৎকালীন যাদব সরকার ও সমাজবাদী পার্টির নির্দেশেই হাত গুটিয়ে নিয়েছিল পুলিশ। দলিত নারীদের ধর্ষণের ঘটনার তদন্ত যিনি করেছিলেন, আয়ুষ্মান খুরানা সেই পুলিশ অফিসারের চরিত্রে অভিনয় করেন। তবে বর্ণবাদের জট খুলতে কেন এক ব্রাহ্মণ নায়কের দরকার হলো এমন প্রশ্নও তোলেন অনেকে।

ছিঁছোরে : বছরের অন্যতম আন্ডাররেটেড চলচ্চিত্র নিতেশ তিওয়ারি পরিচালিত ‘ছিঁছোরে’। ভারতীয় শিক্ষাব্যবস্থা নিয়ে এই সিনেমা। এসেছে সময়ের সঙ্গে পরিবর্তিত হওয়া বৈবাহিক সম্পর্ক ও সন্তানের দায়িত্ব নিয়ে জটিলতার গল্প। বর্তমান ও ফ্ল্যাশব্যাকে দুই সময়ের চরিত্রে অভিনয় করেছেন সুশান্ত সিং রাজপুত, শ্রদ্ধা ভাট, বরুণ শর্মা ও নবীন পলিশেটি। গল্পের বর্ণনা বিশ্বাসযোগ্য, ফলে দর্শক সহজেই যোগাযোগ স্থাপন করতে পেরেছেন।

ওয়ার : পুরোপুরি বলিউডের মূলধারার বিনোদনমূলক সিনেমা এটি। বছরের অন্যতম ব্লকবাস্টারও। আছেন দুই ধুরন্ধর অ্যাকশন তারকা হৃতিক রোশন ও টাইগার শ্রফ। তারা সারাক্ষণ উত্তেজনা সৃষ্টি করেছেন পর্দায়। ফলে বিরক্তির সুযোগ ছিল না তেমন। হাস্যরসাত্মক সংলাপও ছিল যথেষ্ট। হালে বলিউডে দেশপ্রেমের নামে যে ধরনের সিনেমা তৈরি হয়, তার সঙ্গে খানিকটা প্রশ্নবোধক চিহ্নও জুড়ে দেয় ‘ওয়ার’।

সঞ্চিরিয়া : অভিষেক চৌবের সিনেমাটির বক্স অফিস ভাগ্য ভালো নয়। কিন্তু ইতিহাস ও সিনেমাপ্রেমীরা কখনই শিল্পের ওপরে বাণিজ্যকে গুরুত্ব দেন না। সেখানে সফল ‘সঞ্চিরিয়া’। অপরাধীর নৈতিকতা ও কর্মফলের বোঝাকে একসূত্রে গাথে গল্প। দেখানো হয়েছে বিষয় দুটি কীভাবে পুরুষতন্ত্র ও পিতৃতান্ত্রিক ধারণার সঙ্গে যুক্ত। বিদ্রোহ ও মুক্তিকে দারুণভাবে ফুটিয়ে তুলেছেন সুশান্ত সিং রাজপুত, ভূমি পেডনেকর, মনোজ বাজপেয়ি ও রণবীর শোরের মতো তারকারা।

দ্য স্কাই ইজ পিংক : গুরুতর অসুখে ভোগা এক কিশোরীর গল্পে সোনালি বোস যোগ করেছেন ডার্ক কমেডি।
দারুণ হৃদয়ছোঁয়া তার বুনন যেখানে মা-বাবা চরিত্রে অসাধারণ অভিনয় করেছেন প্রিয়াঙ্কা চোপড়া ও ফারহান আখতার। বলিউডকে বিদায় জানানো কাশ্মীরি অভিনেত্রী জায়রা ওয়াসিমকে অবশ্যই এই সিনেমার জন্য স্মরণ করা হবে। অসহনীয় দুঃখের বর্ণনার ভেতরও মানুষের আত্মার সৌন্দর্য উঠে এসেছে পর্দায়। চরিত্রগুলো সবাইকে স্পর্শ করে গেছে।

গাল্লিবয় : গলির ছেলের র‍্যাপ গায়ক হয়ে ওঠার কাহিনী নিয়ে এই চলচ্চিত্র নির্মাণ করেছেন জোয়া আখতার। তার আগের সিনেমাগুলো ছিল উচ্চবিত্তের চরিত্র নিয়ে। গান ও আবেগের মাখামাখি আছে। প্রেমের ঘনঘটাও বাদ যায় না। তবে আলাদা করে চোখে পড়ে পারিবারিক জটিলতা। সঙ্গে দারিদ্র্যকে জয় করার মুহূর্তগুলো। শিল্পের সততা নিয়ে তর্ক আছে, সনাতনী দৃষ্টির বাইরে এর খণ্ডনও আছে। আর পুরোটাই এসেছে রণবীর সিংয়ের মুরাদ চরিত্রের নামা-ওঠার মধ্য দিয়ে। নায়কের অন্যতম সেরা অভিনয়ও এই চলচ্চিত্রে।

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *