বাংলা সাহিত্য জগতে নক্ষত্রপতন। প্রয়াত হলেন কিংবদন্তি বর্ষীয়ান কবি শঙ্খ ঘোষ। কিছুদিন আগেই করোনায় আক্রান্ত হন কবি। গত ১৪ এপ্রিল তাঁর করোনা রিপোর্ট পজিটিভ আসে। বার্ধক্যজনিত সমস্যায় আগেই ভুগছিলেন কবি। শরীরও বেশ দুর্বল ছিল। করোনা সংক্রমণ তাঁকে দুর্বলতর করে। নানা উপসর্গ থাকা সত্ত্বেও বাড়িতেই আইসোলেশনে ছিলেন। মঙ্গলবার রাতে হঠাৎই তাঁর শরীর খারাপ হতে থাকে। শারীরিক অবস্থার অবনতি হওয়ায় বুধবার সকালে বাড়িতেই তাঁকে ভেন্টিলেশনে দেওয়া হয়। কিন্তু শেষরক্ষা হল না। আজ সকালে উল্টোডাঙ্গার নিজ বাসভবনে আচমকাই প্রয়াত হলেন কবি শঙ্খ ঘোষ। বয়স হয়েছিল ৮৯ বছর। শঙ্খবাবু করোনার টিকাও নিয়েছিলেন বলে জানিয়েছে তাঁর পরিবার। তাঁর মৃত্যুতে বাংলা সাহিত্য জগতে অপূরণীয় ক্ষতি হল। শক্তি-সুনীল-শঙ্খ-উৎপল-বিনয়, জীবনানন্দ পরবর্তী বাংলা কবিতার এই পঞ্চপাণ্ডবের বাকি চার জন চলে গিয়েছিলেন আগেই। বুধবার চলে গেলেন শঙ্খ ঘোষও। শুধুমাত্র কবি নন। বাংলা সাহিত্য জগতের স্তম্ভ ছিলেন শঙ্খ ঘোষ। তাঁর সাহচর্যে বহু নবীন লেখক, সাহিত্যিক, কবিরা সৃষ্টির প্রেরণা পেয়েছেন। আসল নাম ছিল চিত্তপ্রিয় ঘোষ। প্রেসিডেন্সি কলেজ থেকে স্নাতক হওয়ার পর কলকাতা বিশ্ববিদ্যালয় থেকে স্নাতকোত্তর ডিগ্রি অর্জন করেছিলেন। কলকাতার বঙ্গবাসী কলেজ, সিটি কলেজ এবং যাদবপুর বিশ্ববিদ্যালয়ে অধ্যাপনা করেছেন। তার পাশাপাশি বাংলা ভাষা নিয়ে চর্চাও করে গিয়েছেন। তাঁর রচিত উল্লেখযোগ্য গ্রন্থ বাবরের প্রার্থনা, মুখ ঢেকে যায় বিজ্ঞাপনে, ওকাম্পোর রবীন্দ্রনাথ, ধূম লেগেছে হৃদকমলে, এ আমির আবরণ। জ্ঞানপীঠ, পদ্মভূষণ, দেশিকোত্তম, সাহিত্য অকাদেমি, রবীন্দ্র স্মৃতি পুরস্কারসহ অজশ্র সম্মানে তিনি ভূষিত হয়েছেন। প্রবাদপ্রতিম কবি শঙ্খ ঘোষের প্রয়াণে শোকপ্রকাশ করেছেন মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়। এদিন সকালেই কবি শঙ্খ ঘোষের প্রয়াণের খবর পেয়েই পরিবারের সদস্যদের ফোন করেন মুখ্যমন্ত্রী। কবি শঙ্খ ঘোষকে রাষ্ট্রীয় মর্যাদায় ও গান স্যালুটের মাধ্যমে শেষ শ্রদ্ধা জানানোর ইচ্ছাপ্রকাশ করেন মুখ্যমন্ত্রী। কিন্তু পরিবারের তরফে জানানো হয়, কবির এই বিষয়গুলি অপছন্দ ছিল। তার উপর করোনা আক্রান্ত ছিলেন শঙ্খ ঘোষ, তাই নীরবেই শেষকৃত্য সম্পন্ন করতে চায় পরিবার। সেই ইচ্ছাকেই মান্যতা দিয়েই শোকপ্রকাশ করেন মুখ্যমন্ত্রী। প্রয়াত কবির শোকবর্তায় মুখ্যমন্ত্রী লিখেছেন, ‘বিশিষ্ট কবি, সাহিত্য সমালোচক ও রবীন্দ্র বিশেষজ্ঞ শঙ্খ ঘোষের প্রয়াণে আমি গভীর শোক প্রকাশ করছি। তিনি আজ সকালে কলকাতায় নিজ বাসভবনে প্রয়াত হন। বয়স হয়েছিল ৮৯ বছর। শঙ্খবাবু যাদবপুর, দিল্লি ও বিশ্বভারতী বিশ্ববিদ্যালয়ে বাংলা সাহিত্যের অধ্যাপনা করেছেন। তাঁর রচিত উল্লেখযোগ্য গ্রন্থ ‘বাবরের প্রার্থনা’, ‘মুখ ঢেকে যায় বিজ্ঞাপনে’, ‘ওকাম্পোর রবীন্দ্রনাথ’, ‘ধূম লেগেছে হৃদকমলে’, ‘এ আমির আবরণ’। জ্ঞানপীঠ, পদ্মভূষণ, দেশিকোত্তম, সাহিত্য অ্যাকাডেমি, রবীন্দ্র স্মৃতি পুরস্কার-সহ অজস্র সম্মানে তিনি ভূষিত হয়েছেন। শঙ্খবাবুর সাথে আমার অত্যন্ত সুসম্পর্ক ছিল। তাঁর প্রয়াণে সাহিত্য জগতের এক অপূরণীয় ক্ষতি হল। আমি প্রয়াত শঙ্খ ঘোষের আত্মীয় পরিজন ও অনুরাগীদের আন্তরিক সমবেদনা জানাচ্ছি।’ কবির মৃত্যুতে সোশ্যাল মিডিয়া পোস্টের মাধ্যমে শোক প্রকাশ করেছেন প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদি । নরেন্দ্র মোদি লিখেছেন, “বাঙালি ও ভারতীয়ের সাহিত্যে অবদানের জন্য শ্রী শঙ্খ ঘোষকে মানুষ মনে রাখবে। ওঁর কাজ অসংখ্য মানুষ পড়েছেন এবং মুগ্ধ হয়েছেন। ওঁর মৃত্যুতে গভীর শোক প্রকাশ করছি। ওঁর পরিবার ও বন্ধুদের জন্য সমবেদনা রইল। ওঁ শান্তি।”