প্রয়াত বর্ষীয়ান অভিনেতা মনু মুখোপাধ্যায়

ফের শোকের ছায়া বাংলা চলচ্চিত্র জগতে। প্রয়াত বর্ষীয়ান অভিনেতা মনু মুখোপাধ্যায়। আজ সকাল ৯টা নাগাদ কসবায় নিজের বাসভবনে শেষ নিঃশ্বাস ত্যাগ করেন তিনি। মৃত্যুকালে তাঁর বয়স হয়েছিল ৯০ বছর। ১৯৩০ সালে কলকাতায় জন্মগ্রহণ করেন মনু মুখোপাধ্যায়। ১৯৪৬ সালে ভারতী বিদ্যালয় থেকে ম্যাট্রিক পাস করেন, এরপর মহারাজা মণীন্দ্র চন্দ্র কলেজ থেকে আইএ পাস করেন। ছোটবেলা থেকেই অভিনয়ের প্রতি প্রবল ঝোঁক ছিল তাঁর। অল্প বয়সে পাড়ার নাটকের দলে মহিলা চরিত্রে অভিনয় করতেন। ১৯৫৭ সালে বিশ্বরূপায় যোগ দেন প্রম্পটার হিসেবে। ক্ষুধা নাটকে ঘটনাচক্রে কালী বন্দোপাধ্যায়ের পরিবর্ত শিল্পী হিসেবে অভিনয়ের সুযোগ পেয়েছিলেন মনু মুখোপাধ্যায়। এরপর ধীরে ধীরে উত্তরনের গল্প। হাইকোর্টে কেরানির পদে চাকরি করেতেন, তবে অভিনয় ছিল তাঁর নেশা। নেশার টানে পেশায় ইতি টেনেছিলেন।  ‘নীল আকাশের নীচে’, ‘অশনি সংকেত’, ‘মৃগয়া’, ‘গণদেবতা’, ‘জয় বাবা ফেলুনাথ’, ‘দাদার কীর্তি’, ‘গণশত্রু’র মতো অসংখ্য ছবিতে অভিনয় করেছেন তিনি। নাট্যজগতেও রেখেছেন অভিনয়ের ছাপ। দীর্ঘদিন ধরেই বয়সজনিত সমস্যায় ভুগছিলেন। তাঁর বড় জামাই জয়ন্ত সর্দার বলেন, হৃদযন্ত্রের সমস্যা ছিল মনু মুখোপাধ্যায়ের। কেওড়াতলা মহাশ্মশানে আজ দেড়টা নাগাদ অন্ত্যেষ্টি ক্রিয়া সম্পন্ন হবে। অভিনেতার মৃত্যুতে শোক প্রকাশ করেছেন মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়।মুখ্যমন্ত্রী শোকপ্রকাশ করে টুইটারে লেখেন, ‘প্রবীণ থিয়েটার এবং চলচ্চিত্র অভিনেতা মনু মুখোপাধ্যায়ের মৃত্যুতে শোকাহত। আমরা ২০১৫ সালে টেলি সম্মান পুরস্কারের আসরে তাঁকে জীবনকৃতি সম্মানে ভূষিত করেছিলাম। তাঁর পরিবার, সহকর্মী ও অনুরাগীদের প্রতি আমার সমবেদনা রইল’। অভিনেতার মৃত্যুতে শোক প্রকাশ করেছে বাংলা চলচ্চিত্র জগত। অভিনেতা-নাট্যকার বিভাস চক্রবর্তী বলেন, ‘মনুদা আমার ভীষণ প্রিয় মানুষ। ভালো অভিনেতাও। আমি মনুদার অনুগ্রাহী ছিলাম। মাঝেমধ্যে দেখা হত।’ অভিনেত্রী ঋতুপর্ণা সেনগুপ্ত বলেন, ‘এই বছরটা সত্যিই ধ্বংসের বছর। আরও একজন প্রিয় মানুষকে হারালাম। মনু আঙ্কেলকে আমি কাজের সূত্রে তো চিনতামই, ব্যক্তিগত সূত্রেও চিনি। উনি আমার সেজ মামা-মামীর প্রিয় মানুষ ছিলেন। অনেক ছোটবেলা থেকেই দেখেছি উনি আমার মামাবাড়িতে আসতেন। ওনার সঙ্গে কাজও করেছি। স্নেহপ্রবণ, আন্তরিক, একজন ভালোমানুষ চলে গেলেন। ওনার আত্মার শান্তি কামনা করি। বাংলা ছবির জগতে উনি অনেক ভালো ভালো কাজ করেছেন। বাংলা চলচ্চিত্র জগত সব সময় ওনার কথা মনে রাখবে। অভিনেতা দেবদূত ঘোষ বলেন, ‘শুধু পর্দায় বা থিয়েটার মঞ্চ নয়, ৬ দশক ধরে রেডিও নাটকেও দাপটের সঙ্গে কাজ করে গেছেন। ওনার কাজ অমর হয়ে থাকবে।’ অভিনেতা শঙ্কর চক্রবর্তী বলেন, ‘গতকালই সৌমিত্র চট্টোপাধ্যায়ের স্মরণসভা ছিল, আর আজ সকালেই দুঃসংবাদ পেলাম। এবার মছলিবাবাও চলে গেলেন। এই বছরটা সত্য়িই বিষ বছর।’ অভিনেতা শুভাশিস মুখার্জী বলেন, ‘আমি মনুবাবা বলে ডাকতাম, আমায় ছেলের মতই স্নেহ করতেন, দ্বিতীয়বার পিতৃহারা হলাম।’ অভিনেতা শান্তিলাল মুখোপাধ্যায় বলেন, ‘প্রম্পটার থেকে চরিত্রাভিনেতা, সব পরিচালকের পছন্দের ছিলেন। গলার আওয়াজ, এমন ছিল যে দু’মাইল দুর থেকেও লোকে শুনতে পেত। এই শূন্যতা পূরণ হবে না।’ অভিনেতা বিশ্বনাথ বসু বলেন,  ‘গোয়ার শ্য়ুটিংয়ের এক ঘটনার কথা খুব মনে পড়ছে। হোটেলে মনুকাকুর রুমে ইন্টারকম খারাপ ছিল। চায়ের অর্ডার দেওয়া যাচ্ছে না। মনুকাকু বললেন জানলাটা একটু ফাঁক করা, আর তারপরই এমন বিকট আওয়াজ করে এমন ডাকলেন যে ১ মিনিটের মধ্য়ে রুম সার্ভিসের লোকারা চলে এলেন। খুবই মজার মানুষ ছিলেন।’ 

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *