জেএনইউ-র ঘটনার প্রতিবাদে সরব বলিউডের একাংশ

নাগরিকত্ব সংশোধনী আইন প্রনয়ণ করা নিয়ে গোটা দেশে অশান্তির পরিবেশ অব্যাহত। এরই মধ্যে গত রবিবার জেএনইউ-র ঘটনা যেন আগুনে ঘৃতাহুতির কাজ করেছে। এর আগেও জামিয়া মিলিয়া ইসলামিয়া বিশ্ববিদ্যালয়ে পুলিশি তাণ্ডবের প্রতিবাদে পথে নেমেছিলেন বলিউড তারকাদের একাংশ। ফের রবিবার জেএনইউ-তে মারধরের ঘটনায় মুম্বইয়ে পথে নেমে প্রতিবাদে সামিল হলেন তাঁরা। গেটওয়ে অফ ইন্ডিয়ার সামনে জড়ো হয়ে স্লোগান দিচ্ছেন তারকারা। অনুরাগ কাশ্যপ, অনুভব সিনহা, রীমা কাগতি, জোয়া আখতার, স্বরা ভাস্কর, তাপসী পান্নু, রিচা চড্ডা, রাহুল বোস, সুধীর মিশ্র, রাজ কুমার গুপ্তা, ভাসান বালা, বিশাল ভরদ্বাজ, আলি ফজল, আমাইরা দস্তুর, সৌরভ শুক্লা এবং দিয়া মির্জা- সহ আরও অনেক পরিচিত মুখেরা মুম্বইয়ের বিভিন্ন জায়গায় জেএনইউ-র হিংসার প্রতিবাদে শান্তিপূর্ণ প্রতিবাদ জানান। রবিবার সন্ধেতে রীতিমতো লোহার রড, ব্যাট, অ্যাসিড নিয়ে বিশ্ববিদ্যালয় চত্বরে হামলা চালায় এবিভিপি-র গুন্ডারা। সন্ধের সময় কয়েকটি গাড়ি করে ক্যাম্পাসে প্রবেশ করে সশস্ত্র গুন্ডাবাহিনী। হামলা চালায় মেয়েদের (সবরমতী) হোস্টেলে। রীতিমতো লোহার রড দিয়ে মারা হয় পড়ুয়াদের। বাদ যাননি ছাত্র সংসদের সভাপতি, বাংলার মেয়ে ঐশী ঘোষও।তাঁকেও মারধর করা হয় বলে অভিযোগ। মাথা ফেটে যায় তাঁর ও অনেক পড়ুয়ার। রক্তাক্ত অবস্থায় তাঁদের নিয়ে যাওয়া হয় হাসপাতালে। ঐশীকে ভর্তি করা হয়েছে এইমসের ট্রমা কেয়ার ইউনিটে। পুলিশ ও বিশ্ববিদ্যালয়ের নিরাপত্তারক্ষীরা নীরব দর্শকের ভূমিকা পালন করে বলেও অভিযোগ উঠেছে। পড়ুয়াদের বাঁচাতে গিয়ে আহত হন অধ্যাপিকা সুচরিতা সেন।জখম অবস্থায় তাঁকেও ভর্তি করা হয়েছে এইমসে।  রবিবারের ঘটনার পরই অভিনেত্রী সোনম কাপুর, রিচা চাড্ডা, কঙ্কণা সেনশর্মা, অনুরাগ কাশ্যপ, তাপসী পান্নু,কৃতী শ্যাননের মতো বেশ কিছু বলি সেলেব ঘটনার তীব্র প্রতিবাদে সরব হন সোশ্যাল মিডিয়ায়। তাঁদের মুখে একটাই বক্তব্য, ‘যা হয়েছে তা মেনে নেওয়া যায় না’!  তাপসী, রিচার মতো নতুন প্রজন্মের তারকাদের এমন জ্বলন্ত বিষয় নিয়ে পথে নামার উৎসাহকে সাধুবাদ জানিয়ে ট্যুইট করেছেন শশী থারুরও। রিচা চড্ডা জেএনইউ-র হিংসার কড়া নিন্দা করে বলেছেন, ‘যেখানে শিক্ষা প্রতিষ্ঠানে গুরুদের ভগবানের সমতুল্য মবে করা হয়, সেখানে প্রফেসররা আক্রান্ত। কী হচ্ছে? লোহার রড দিয়ে মহিলাদের মারছে। এ দেশের মানুষ গাধা নয়। দয়া করে সংযত হন।’ কার্টার রোডে প্রতিবাদ সভায় অংশ নিয়েছিলেন অনুরাগ কাশ্যপ। তিনি বললেন, ‘পুলিশকে যেভাবে নিয়ন্ত্রন করা হচ্ছে তার নিন্দা করি। সাধারণ মানুষকে এত ভয় দেখানো হয়েছে যে এখন তারা আর ভয় পাচ্ছে না। আমরা ছাত্রদের পাশে রয়েছি এবং তারা আমাদের অনুপ্রেরণা। আমি তাদের কোনও বার্তা দিতে চাই না। পড়ুয়াদের মেজেস আমাদের জাগিয়ে তুলেছে। টুইটার থেকে পালিয়ে আমি নিজের কাজে নিজের মতো ব্যস্ত ছিলাম। মনে হয়েছিল, ‘আমি কেন এত ভাবব? কাজ করে পয়সা রোজগার করছিলাম।’ ছাত্ররা আমাকে রাস্তা দেখিয়েছে। তাদের জন্য ফেরত এসেছি। তাদের পাশে দাঁড়াতে এসেছি। তাদের পিছনে দাঁড়াতে এসেছি। তাদের থেকে শিখতে এসেছি।’ তিনি আরও বলেন, ‘সরকারকে বলতে চাই বতর্মানে যে অন্যান্য ইস্যুগুলো রয়েছে সেই দিকে নজর দিন এবং আমাদের নিয়ে ধর্মের নামে রাজনীতির খেলাটা বন্ধ করুন। আমরা বোকা নই। দেখে চলেছি। আমরা জানি কীভাবে দাঙ্গা হয় এবং কীভাবে এই পরিস্থিতি তৈরি করা হয়। আপনি কী করতে চান ও কী উদ্দেশ্য, তা স্পষ্ট বুঝতে পাচ্ছি। আপনি আমাদের কোথায় নিয়ে যাচ্ছেন সেটাও দেখতে পাচ্ছি। আমরা আপনার উদ্দেশ্য সফল হতে দেব না।’ স্বরা ভাস্করও এদিন কার্টার রোডের প্রতিবাদ সভায় উপস্থিত ছিলেন। তিনি বলেছেন, ‘আশা করছি দেশের প্রত্যেকে তাদের নীরবতা ভাঙবেন। অনেক হয়েছে। হিন্দিতে একটা কথা আছে, ‘বহত হুয়া সম্মান।’ আমরা এই দেশে সেই পর্যায়ে পৌঁছে গিয়েছি যেখানে বারবার যারা তাদের দায়িত্ব পালনে ব্যর্থ হয়েছে, তাদের সরকার এবং আইন ব্যবস্থার প্রতি যথেষ্ট সম্মান দেখিয়েছি। তারা কেবল নাগরিক এবং দেশের সংবিধানের প্রতি ভুল করছে।’ পথে নেমে প্রতিবাদ বা মিডিয়াকে সরাসরি কোনও বাইট না দিলেও নিজেদের ইনস্টাগ্রাম অ্যাকাউন্টের স্টোরিতে JNU-এর ঘটনার তীব্র প্রতিবাদ জানালেন আলিয়া ভাট ও বরুণ ধাওয়ান। পূজা ভাট,আয়ুষ্মান খুরানা, রিতেশ দেশমুখ, জেনেলিয়া ডিসুজা, বিশাল দাদলানি,  শাবানা আজমির মতো সেলেবরা তীব্র প্রতিবাদ জানিয়েছেন এই ঘটনার। এমনকি প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদীর ডাকা ইন্টারঅ্যাক্টিভ মিটিংয়ের অংশ নেননি বলিউডের প্রথম সারির সেলেবরা। সোশ্যাল হ্যান্ডেলে নয়, সাংবাদিকদের সামনে জওহরলাল নেহরু বিশ্বব্যালয় ক্যাম্পাসে হামলার ঘটনার বিরুদ্ধে ফুঁসে ওঠেন অনিল কাপুর৷ সোমবার মালাং-এর ট্রেলার লঞ্চের অনুষ্ঠানে হাজির হন অনিল কাপুর, আদিত্য রয় কাপুর, দিশা পাটানিরা৷ সেখানেই বলিউড অভিনেতাকে JNU ঘটনার বিষেয় প্রশ্ন করা হয়৷ যার উত্তরে অনিল কাপুর বলেন, ‘জওহরলাল নেহরু বিশ্ববিদ্যালয়ে যে ঘটনা ঘটেছে, তা অত্যন্ত দুঃখজনক৷ পড়ুয়া ও শিক্ষকদের উপর মুখোশধারী দুষ্কৃতীরা যেভাবে হামলা চালিয়েছে, সেই ছবি দেখে আমি সারা রাত ঘুমোতে পারিনি৷’ অপরাধীদের চিহ্নিত করে শিগগিরই শাস্তির ব্যবস্থা করতে হবে বলে প্রকাশ্যে সুর চড়ান বলিউডের বর্ষীয়ান অভিনেতা৷ অনিল কাপুরের পাশাপাশি জওহরলাল নেহরু বিশ্ববিদ্যালয়ের ঘটনায় সুর চড়াতে দেখা যায় আদিত্য রয় কাপুরকেও৷স্পষ্ট ভাষায় তিনিও জানালেন, ‘আমাদের দেশে হিংসার কোনও জায়গা নেই। যারা এই কাজ করেছে তাদের আড়াল না করে কঠোর শাস্তি দেওয়া উচিত।’